ঠাকুরগাঁওয়ের ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ১৯৩ জন। উপায় না পেয়ে অভিবাবকরা মেঝে ও বারান্দায় পেতেছেন বিছানা। এভাবে কয়েকদিন ধরে চিকিৎসা কার্যক্রম চললেও রোগীর চাপ কমছে না। অবশেষে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের গাছতলায় বিছানা পেতেছেন অভিভাবকরা। সন্তানদের এভাবে রেখেই চিকিৎসা করাচ্ছেন তারা।

এদিকে অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও।

 

শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।

এই শিশুদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় ভুগছে।

 

হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এক শয্যায় দুই থেকে তিন শিশুকে রাখা হচ্ছে। ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও অবিভাবকদের বসার জায়গাতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। যারা এসব জায়গায়ও পাননি তারা আশপাশের ভবন, এমনকি গাছতলায় বিছানা পেতে শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। রাতে তারা জায়গা নেন হাসপাতালের অন্য কোনো পাকা জায়গায়।

 

ওয়ার্ডটির একটি শয্যায় শিশুদের কোলে নিয়ে বসে আছেন চারজন নারী। তাদের একজন ঠাকুরগাঁও জেলার শাহিনের স্ত্রী রাবেয়া । তিনি বলেন, ‘এক বিছানায় চারজন। জায়গায় সংকট তাই এই অবস্থা।  জায়গা না থাকায় শিশুদের নিয়ে পালা করে ঘুমাতে হচ্ছে। ওয়ার্ড শয্যার বাইরে বিছানা না থাকার কারণে বাকি সময় শিশুকে কোলেই রাখতে হয়।’

 

হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডের ৫০ মিটারে দূরে ভেষজ বাগানের গাছের ছায়ায় শিশুদের নিয়ে অবস্থান করছেন অবিভাবকরা। ওয়ার্ডের বারান্দায় মেয়ে শিমুকে (২) নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আহসান আলী ও তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। তারা বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। এ কারণে শিশুকে নিয়ে গাছ তলায় থাকতে হচ্ছে। শিশুর চিকিৎসা এখানেই চলছে।

 

জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে আসা রহিমা বেগম বলেন, ‘ওয়ার্ডে একটি বিছানায় ৩-৪ জন করে আছে। ওয়ার্ডের থেকে এখানেই ভালো আছি। ওয়ার্ডে ফ্যান ঘুরলেও বাসাত পাওয়া যায় না, এখানে প্রকৃতির বাতাস পাচ্ছি।’

 

বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাদের বেশিরভাগই শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যথায় আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। এ সময় অবিভাবকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রচুর তরল ও ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার দিতে হবে। শিশু ঘেমে গেলে জামাকাপড় পরিবর্তন ও ঘাম মুছে দিতে হবে।’

 

এই চিকিৎসক জানান, স্বাভাবিক সময়ে ৬০ থেকে ৭০ শিশু ভর্তি থাকে। এখন ১৭০ থেকে ১৮০ শিশু ভর্তি থাকছে। গতকাল ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ১৯৩ শিশু। এর মধ্যে নবজাতক ৩৬। সবচেয়ে বেশি ৯৩ শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

 

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ চপল বলেন, ‘হাসপাতালে শিশুর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক তাদের শিশুদের এখানে এনে চিকিৎসা করান। এ কারণে এই হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থাকে। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত রোগীদের শয্যায় গাদাগাদি করে, মেঝেতে ও বারান্দায় থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।’